Correspondent: The Bangladesh Today
এই ধরনের ‘ঘোষণা’ অনেকে বিশ্বাস করে নিজেদের প্রোফাইলে শেয়ার করছেন, ভেবে যে এভাবে তারা মেটার নীতিমালার বাইরে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু সত্য হলো-এই পোস্টটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও আইনগতভাবে অকার্যকর।
🔍 পোস্টটির বিবরণ ও প্রসার
এই পোস্টের ভাষা কিছুটা ভয় ধরানো এবং নাটকীয়:
“Meta এর নতুন নীতিমালায় আপনার সব ছবি, মেসেজ, ভিডিও তাদের সম্পত্তি হয়ে যাচ্ছে। আপনি এখনই এই পোস্টটি কপি করে আপনার প্রোফাইলে দিলে তা আইনি দলিল হিসেবে কাজ করবে।”
এই কৌশলটি আসলে বহু বছর ধরেই ঘুরে ফিরে আসছে বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন দেশে। এর মূল ভিত্তি একটি ভয়-ফেসবুক আমাদের তথ্য চুরি করছে, আর আমরা না জেনে তাদেরকে অনুমতি দিয়ে বসে আছি।
🧾 বাস্তবতা: মেটার সঙ্গে আপনি কীতে সম্মত হয়েছেন?
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যবহার শুরু করার সময় আপনি Meta-এর Terms of Service (সেবার শর্তাবলি)-তে সম্মতি দেন। এর মধ্যে উল্লেখ থাকে:
গ. এই অনুমতি আপনি নিজেই দেন। এটি আপনি কোনো ফেসবুক পোস্ট দিয়ে বাতিল করতে পারেন না।
অর্থাৎ, আপনি যখন তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন, তখন আপনি আগেই সম্মতি দিয়েছেন-তারা আপনার তথ্য ও কন্টেন্ট নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। আপনি সেটি চাইলে মুছে ফেলতে পারেন, অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট বা ডিলিট করেও ফেলতে পারেন।
✅ বিশ্বস্ত ফ্যাক্ট-চেকিং সাইটগুলোর মতামত
এই ধরনের ভাইরাল পোস্টকে “পুরোপুরি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর” বলে অভিহিত করেছে। তারা বারবার সতর্ক করেছে, “এটি একটি পুরনো গুজব যা ২০১২ সাল থেকে নানা সময়ে ছড়িয়েছে।”
🔹 PolitiFact (www.politifact.com):
“আপনার তথ্যের কপিরাইট আপনি নিজেরাই রাখেন। তবে মেটাকে আপনি একটি সীমিত লাইসেন্স দেন যাতে তারা কন্টেন্ট পরিবেশন করতে পারে। কোনো ফেসবুক পোস্ট এর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না।”
🔹 TIME Magazine:
২০২৫ সালের জুলাই মাসে “Goodbye Meta AI” শিরোনামে একটি নতুন ধরনের একই কনটেন্ট ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় মেটা এখন আপনার ছবি AI ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহার করবে-এটিও পুরোপুরি ভুয়া বলে প্রমাণ করে টাইম।
🔹 ABC News এবং CBS News:
দুটি মাধ্যমই ব্যাখ্যা করেছে, ফেসবুক কখনো আপনার অনুমতি ছাড়া কন্টেন্ট বিক্রি করে না বা ব্যক্তিগত বার্তা ব্যবহার করে না। এই পোস্টগুলো কেবল ভয়ের মনোভাব ছড়ায়।
⚠️ কেন এই পোস্ট বিপজ্জনক?
৩) অনেকে নিজেদের গোপনীয়তা সেটিংস পরিবর্তন না করে শুধু এই পোস্ট শেয়ারে নিজেদের “নিরাপদ” ভাবেন।
🔐 আপনি কীভাবে নিজের তথ্য নিরাপদ রাখবেন?
এই ধরণের ভুয়া পোস্টে ভরসা না করে, বরং নিচের কাজগুলো করুন:
৩। Two-Factor Authentication চালু করুন।
৪। অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট ডিলিট করুন।
৫। Meta-র নীতিমালা পড়ুন: আপনার কনটেন্ট কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বোঝা জরুরি।
🗣️ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
🔚 শেষ কথা
“আমি ফেসবুককে অনুমতি দিচ্ছি না..…”-এই ঘোষণামূলক পোস্টে কোনো আইনি শক্তি নেই। এটি শুধুই একটি সামাজিক গুজব, যা বহুবার ভাইরাল হয়ে এসেছে, আবার ফিরেছে। সচেতন ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো ভুয়া পোস্ট না ছড়িয়ে, বাস্তব তথ্য ও নিজের নিরাপত্তা নিজের হাতেই রাখা।
📰 সংক্ষিপ্ত তথ্যছক
বিষয় | সত্যতা |
---|---|
ফেসবুক পোস্ট দিয়ে মেটার ওপর আইনি নিয়ন্ত্রণ দেওয়া যায়? | ❌ না |
আপনার কনটেন্টের মালিক আপনি? | ✅ হ্যাঁ |
মেটা কনটেন্ট বিক্রি করে? | ❌ না |
আপনি নিজে কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কে কী দেখবে? | ✅ হ্যাঁ |
পোস্টে লেখা “UCC 1-308” ইত্যাদি কি সত্যি আইনি ভাষা এখানে প্রযোজ্য? | ❌ না |
0 Comments